এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসায় লাভ করার উপায় পর্ব-২

মোঃ ইব্রাহীম সবুজ

প্রিয় এজেন্টবৃন্দ, আজকের এই লিখা শুধুমাত্র আপনাদের জন্য।

আপনারা অনেকেই হয়ত নতুন এজেন্ট হয়েছেন। অথবা অনেকে হয়তো এজেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করতে চাইছেন। আবার অনেকে হয়ত কনফিউজড, এই কারনে যে আপনি এই বিজনেস কতটুকু সফলভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।

আমি আগের লেখায় বলেছি, এজেন্ট হিসাবে সফল হতে গেলে আপনাকে কি কি মাথায় রাখতে হবে। আজ আলোচনা করব কিভাবে আপনি কমিশন পাবেন! আপনার মূল ফোকাস কোন দিকে থাকতে হবে!

প্রথমেই আপনাকে দেখতে হবে আপনি কোথায় আউটলেট নিতে চাচ্ছেন? জায়গা সিলেকশন এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনাকে ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং এর লাইসেন্স দিবে। কোন ব্রাঞ্চ এর না। আপনি হয়ত ব্যাংকিং এর ম্যাক্সিমাম সেবাই দিতে পারবেন। কিন্তু ব্যাক্তি হিসাবে আপনার সীমাবদ্ধতা থাকবে। আপনি ইচ্ছা করলেই ব্রাঞ্চের মত সেবা দিতে পারবেন না। এখন ধরুন আপনি এমন একটা জায়গা সিলেক্ট করছেন যেখানে আগে থেকেই অনেকগুলো ব্যাংকের শাখা আছে। সেখানে আপনি কতটুকু ভাল করতে পারবেন! ভাল করার সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা আপনি খেলার জন্য এমন মাঠ ঠিক করছেন যেখানে পেলে, ম্যারাডোনা আগে থেকেই আছে। সেখানে আপনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলার হয়ে বাছাইপর্ব পার হইতে পারবেন না। আর মনে করেন এই মাঠের দরশক হইল আপনার গ্রাহক তাহলে মানুষ টিকিট কেটে পেলে ম্যারাডোনার খেলা দেখবে আপনার টা দেখবে না।

এবার বলি কেন তারা আপনার কাছে আসবে না? এর এইটাই কারন আপনার ইনভেস্টমেন্ট হবে সীমাবদ্ধ। আপনি হয়ত ক্যাশ টাকা রাখবেন ২ লাখ (এজেন্ট ব্যালেন্স ও ভোল্ট মিলায়ে) আমি ধরেই নিলাম আপনার সব টাকা আপনার মাদার একাউন্ট এ আছে। তার মানে টোটাল ২ লাখ টাকা আছে আপনার মাদার একাউন্টে। এখন আপনার কোন কাষ্টমার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে আসল। আপনি কিন্তু তার টাকা জমা নিতে পারবেন না। তাহলে সেই গ্রাহক ফেরত যাবে। কিন্তু সেই একই গ্রাহক যখন কোন ব্রাঞ্চ এ যাবে সেখানে কিন্তু সে যত খুশি ডিপজিট করতে পারবে। তাই বলছি এই মাঠে আপনি ছোট খেলোয়ার। যাকে খেলতে হবে অনেকটা ফাকা মাঠে। তাহলেই আপনি গোল দিতে পারবেন। কারন গ্রাহক পেলে ম্যারাডোনা বাদ দিয়ে আপনার খেলা দেখতে যাবে না। তাই এমন একটা জায়গা সিলেক্ট করুন যেখানে কোন ব্যাংকের শাখা নাই। থাকলেও সরকারি ব্যাংক থাকুক। সরকারি ব্যাংক থাকলে খুব বেশি প্রব্লেম হবে না এই কারনে যে সরকারি ব্যাংকের সেবার মান খুব একটা ভাল হয় না সবসময়।

এবার আসি কমিশন এর কথায়, মাথায় একটা ব্যাপার সব সময় রাখবেন ব্যাংক আপনাকে কমিশন তখনই দেবে যখন সে নিজে এখান থেকে প্রফিট করতে পারবে।আর আপনি কোন জায়গা সবচেয়ে বেশী ফোকাস থাকবেন! আপনারা সবাই হয়ত জানেন আর সি সি বিল্ডিং এর কথা। যে বিল্ডিং এর ফাউন্ডেশন থাকে। যে বিল্ডিং এর ফাউন্ডেশন যত মাটির গভীরে হয় সেই বিল্ডিং তত বেশী হাইরাইজ বিল্ডিং হয়। ঠিক একইভাবে আপনার আউটলেট এর ফাউন্ডেশন হবে আপনার আউটলেটের কাষ্টমার ডিপজিট। যেটাকে আমরা বলি ফ্লট শেয়ারিং।

এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক এজেন্টই ক্লিয়ার না! এই ডিপজিট এজেন্টের টাকা না। এই ডিপজিট হল তার আউটলেটে যারা টাকা রাখছে তাদের টাকা। আর একটু ক্লিয়ার করে বলা যাক। ধরুন আপনার আউটলেট ১৫ দিন আগে ওপেন হয়েছে। এই ১৫ দিনে হয়ত আপনার ওখানে একাউন্ট করছে A-Z পর্যন্ত। টোটাল একাউন্ট হয়েছে ২৬ টি। A হয়তো তার একাউন্টে রাকছে ৫ লাখ টাকা, B হয়ত রাখছে ১০ লাখ এই ভাবে প্রতিটা একাউন্টে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু টাকা রাখছে। যখন এই ২৬ টা একাউন্ট এর সকল টাকা যোগ করে ১ কোটি টাকা হবে (১ কোটি বলা হিসাবের সুবিধার জন্য) তখন এই টাকা থেকে আপনি যে কমিশন পাবেন সেইটাকেই বলে ফ্লট শেয়ারিং। এখান থেকে আপনি আপনার আসল কমিশনটা পাবেন। আশা করি সবাই ফ্লট শেয়ারিং এর ব্যাপারটি বুঝতে পারছেন।

এবার বলি কোন ধরেনের একাউন্ট থেকে আপনি কত % কমিশন পাবেন। আপনার আউটলেট এ গত ১৫ দিনে যে ২৬ টা একাউন্ট হয়েছে সেই একাউন্ট যে সবাই সেভিংস একাউন্ট করেছে এমন হবে না। কেউ হয়ত কারেন্ট একাউন্ট করছে, কেউ সেভিংস আবার কেউবা ফিক্সড ডিপজিট একাউন্ট। এখন আপনার আউটলেট এ যে কয়েকটি সেভিংস একাউন্ট আছে সেই একাউন্ট গুলাতে যে টাকা আপনার গ্রাহক জমা রাখছে সেই সকল গ্রাহকের সকল টাকা যোগ করে ১ কোটি টাকা হয় সেখান থেকে আপনি বছরে ২% পাবেন আই মিন ২ লাখ টাকা কমিশন পাবেন। কারেন্ট একাউন্টে ১ কোটি হলে আপনি পাবেন ৩% মানে বছরে ৩ লাখ। ফিক্সড ডিপজিট এ পাবেন ১ লাখ। ( আমি ডিপজিট এক কোটি টাকা ধরে হিসাব করেছি আপনাদের বুঝার সুবিধার জন্য) কমিশন আপনি প্রতি মাসের শেষ দিনেই পেয়ে যাবেন, ব্যাপারটি কিন্তু আবার এমন না যে, আপনি ডিপজিট ১ কোটি টাকার কম থাকলে কমিশন পাবেন না।

আপনার আউটলেটের ডিপজিট ৫০ হাজার টাকা থাকলেও আপনি কমিশন পাবেন। এখন অনেকে ভাবতে পারেন কারেন্ট একাউন্ট এ বেশী কমিশন, ফিক্সডে কম কেন? আমি আগেই ক্লিয়ার করেছি ব্যাংক নিজের লস করে কোনদিন আপনাকে কমিশন দেবে না। আপনারা সকলেই জানেন কারেন্ট একাউন্ট এর ডিপজিট এর জন্য গ্রাহক কোন লাভ পায় না। তাই এখান থেকে আপনারা বেশী কমিশন পাবেন। সেভিংস এবং টি ডি এস এর জন্য ব্যাংকের ইন্টারেস্ট দিয়ে হয় গ্রাহক কে তাই এখান থেকে এজেন্ট কম কমিশন পায়। এইটাই হল এজেন্ট আউটলেট এর ফাউন্ডেশন।

এখন আসি অন্যান্য কমিশন এর কথায়, ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট আউটলেটে প্রায় ৩০ ধরনের সেবা প্রদান করা হয়। যেমন রেমিট্যান্স, আর টি জি এস, ফান্ড ট্রান্সফার, লোন ইত্যাদি। আপনি আপনার আউটলেট থেকে যে সেবাই দেন না কেন তার থেকে আপনি কমিশন পাবেন। অনেক এজেন্ট এর ফোকাস থাকে অন্য দিকে। যেমন বিদুৎ বিল, আর টি জি এস, রেমিট্যান্স। যাদের ফোকাস ডিপজিটে না থেকে এই দিকে ফোকাস থাকে তারা এখানে সারভাইব করতে পারনে না বেশি দিন। প্রযুক্তি উন্নত হবে যত বেশি এই সেবাগুলো ততই মানুষের মোবাইল এর ভেতর চলে আসবে। মানুষ একসময় বিল দেওয়ার জন্য আর ব্যাংকে যাবে না। তখন আপনি কি করবেন! এই জন্য বলছি যারা এই বিজনেস এ ভাল করতে চান তারা ডিপজিট ও একাউন্টে ফোকাস করেন। গ্রাহক যেন আপনার অফিসে আসে। আর গ্রাহকের সাথে ব্যাংকের সম্পর্ক হয় একাউন্ট খোলার মাধ্যমে। যে মানুষটা আপনার কাছে একাউন্ট খুলবে সে কখনই বিল দেওয়ার জন্য অন্য ব্যাংকে যাবে না।

এখন আসি এজেন্ট পয়েন্ট থেকে মাসে কতটাকা ইনকাম করা সম্ভব! ব্যাংক এশিয়াতে সেই সকল এজেন্টই বেশি কমিশন পায় যাদের ডিপজিট বেশি। আমাদের ১০ কোটি টাকার উপরে ডিপজিট আছে বেশ কিছু আউটলেট এর। এখন আমি ফ্লট শেয়ারিং যদি ২% ধরি তাহলে সে এই দশ কোটি টাকা থেকে মাসে পায় প্রায় ২ লাখ টাকা। আর আপনাকে বুঝতে হবে যে এজেন্ট শুধুমাত্র ফ্লোট শেয়ারিং থেকে মাসে ২ লাখ টাকা পায় সে অন্য সকল সেবা মিলায়ে মিনিমাম আরো ১ লাখ টাকা কমিশন পায়। টোটাল প্রায় ৩ লাখ। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সব সময় চাই সকল এজেন্টগণ ভাল করুক, প্রফিট করুক।

কেননা এই বিজনেস এ কিছু কিছু বিষয় ঠিকঠাক মত মেনে চললে আর পজিটিভ থাকলে অনেক ভাল করা সম্ভব। ধন্যবাদ সবাইকে।

Share and Enjoy !

Shares